ফিলিস্তিনের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে ঘাতক ইসরায়েলের বিরুদ্ধে পাকিস্তানসহ সব মুসলিম রাষ্ট্রের ওপর এখনই সশস্ত্র জিহাদ ফরজ হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিশ্বের প্রখ্যাত ইসলামি ব্যক্তিত্ব ও পাকিস্তান সুপ্রিমকোর্টের শরীয়া বেঞ্চের সাবেক বিচারপতি মুফতি মুহাম্মদ তাকি উসমানি।
তিনি বলেছেন, ফিলিস্তিদের জন্য মানবিক, আর্থিক ও বাস্তবিক সহায়তা করা মুসলিম উম্মাহর ওপর অবশ্যক কর্তব্য। পাকিস্তানসহ সকল মুসলিম রাষ্ট্রের ওপর এখনই সশস্ত্র জিহাদ ফরজ হয়ে গেছে। শুধু মুখরোচক কথা দিয়ে নিজেদের দায়িত্ব থেকে মুক্ত হওয়া আর সম্ভব নয়। পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদে জাতীয় ফিলিস্তিন সম্মেলনে বক্তব্য দিতে গিয়ে বৃহস্পতিবার মুফতি তাকি উসমানি সাফ এসব জানিয়ে দিয়েছেন। খবর মিডল ইস্ট আইয়ের।
মুফতি তাকি উসমানি বলেন, ‘আমাদের আসল করণীয় ছিল গাজায় গিয়ে সংগ্রামে (জিহাদ) অংশ নেয়া, এখানে সম্মেলনে জড়ো হওয়া নয়। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমরা এখনো ফিলিস্তিনি মুজাহিদদের জন্য বাস্তবে কিছু করতে পারিনি। ফিলিস্তিনের জন্য জান-মাল উৎসর্গ করা পুরো মুসলিম উম্মাহর ওপর ফরজ। এই মুহূর্তে জিহাদে অংশ না নিলে মুসলিম দেশগুলোর সেনাবাহিনীর আদতে কাজ কী।’
তিনি প্রশ্ন রাখেন, ‘কালেমা পাঠ করা ৫৫ হাজারেরও বেশি মুসলিম নিহত হওয়ার পরও কি আমাদের জন্য জিহাদ ফরজ হয়নি?’
পাকিস্তানের অবস্থান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পাকিস্তান কখনোই ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেয়নি। পাকিস্তান রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা ইসরায়েলকে ‘অবৈধ সন্তান’ বলেছিলেন। ইসরায়েল যতই শক্তিশালী হোক, আমাদের অবস্থান অটল থাকবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘যখন আমাদের ইসরায়েলের সঙ্গে কোনো চুক্তিই নেই, তখন কোনো অজুহাত চলে না। আর যারা চুক্তি করেছিল, তাদের ক্ষেত্রেও ইসরায়েল সেই সব চুক্তি ভেঙে দিয়েছে—তাই চুক্তির বাধ্যবাধকতাও আর নেই।’
মুসলিম বিশ্বের সমালোচনা করে মুফতি তাকি উসমানি বলেন, ‘মুসলিম জাতি প্রথম কিবলা রক্ষায় লড়াইরত মুজাহিদদের কোনো বাস্তব সহায়তা করতে পারেনি। আজ তারা কেবল প্রস্তাবনা আর সম্মেলন নিয়েই ব্যস্ত। মুসলিম উম্মাহর উচিত ছিল এখনই জিহাদের ঘোষণা দেয়া।’
তিনি বলেন, ‘ফিলিস্তিনে যুদ্ধবিরতির চুক্তি হলেও বোমা হামলা থামেনি। ইসরায়েলের কোনো নৈতিক মূল্যবোধ নেই, তারা আন্তর্জাতিক আইনও মানে না।’
গাজাজুড়ে ইসরায়েলের বর্বরোচিত হামলায় বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) ভোর থেকে আরও ২৯ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এর পাশাপাশি নতুন হামলা ও হতাহতের খবরও পাওয়া যাচ্ছে। সংবাদমাধ্যম আলজাজিরাকে অবরুদ্ধ ভূখণ্ডটির চিকিৎসা সূত্রগুলো এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।
এদিকে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক টেড্রোস আধানম গেব্রেয়েসুস সতর্ক করে বলেছেন, গাজায় ত্রাণ প্রবেশে ইসরায়েলের অবরোধের কারণে সেখানে আরও রোগব্যাধি এবং মৃত্যুর আশঙ্কা বাড়ছে। বর্তমানে গাজায় ১০ হাজারের বেশি মানুষকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য সরিয়ে নেয়া জরুরি।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলের গাজা আগ্রাসনে এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৫০ হাজার ৮৮৬ ফিলিস্তিনি নিহত এবং এক লাখ ১৫ হাজার ৮৭৫ জন আহত হয়েছেন। সরকারী গণমাধ্যম কার্যালয় জানিয়েছে, মৃত্যু সংখ্যা ৬১ হাজার ৭০০ ছাড়িয়ে গেছে এবং ধ্বংসস্তুপের নিচে নিখোঁজ হাজার হাজার মানুষকে মৃত বলে ধরা হচ্ছে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ভোরে গাজার শাসকগোষ্ঠী হামাসের নেতৃত্বাধীন হামলায় ইসরায়েলে অন্তত ১,১৩৯ জন নিহত হয় এবং ২০০-র বেশি মানুষকে বন্দি করে গাজায় নিয়ে যাওয়া হয়। এই ঘট্নার কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে গাজায় ভয়াবহ হামলা শুরু করে তেল আবিব।