টাকা আয়ের জন্য কখনো মাথার চুল ন্যাড়া করে আবার কখনো ভারী কানের দুল লাগিয়ে টিকটক বানিয়ে সেই ভিডিও ফেসবুকে দিচ্ছেন শারমীন শিলা নামের এক নারী। এছাড়াও গায়ের রং ফরসা করার ক্রিম বিক্রি করায় ফেসবুকে ‘ক্রিম আপা’ বা ‘কিরিম আপা’ নামে পরিচিতি পেয়েছেন তিনি।
জানা যায়, সাভারের বাইপাইল এলাকায় ‘ক্রীম আপা বিউটি পারলার’ নামে শারমীন শিলার একটি বিউটি পারলার আছে। তিনি ভিডিওতে কীভাবে ক্রিম ব্যবহার করতে হবে, তা জানান। এর বাইরে কী রান্না করছেন, কী খাচ্ছেন- এসব নিয়ে করা বিভিন্ন ভিডিওতে মেয়েকে হাজির করেন। মেয়ে ভয়ে চুপ করে থাকে। কখনো হাসে আবার কখনো অস্বাভাবিকভাবে কাঁদে। মেয়ে সারাক্ষণ আতঙ্কের মধ্যে থাকে তা বিভিন্ন ভিডিওতে স্পষ্ট বোঝা যায়।
এ নিয়ে গত রোববার ‘একাই একশো’ নামের শিশুদের সুরক্ষায় সামাজিক আন্দোলনের পক্ষে আন্তর্জাতিক শিশু শান্তি পুরস্কার পাওয়া বাংলাদেশের কিশোর সাদাত রহমানসহ অন্যরা ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ‘ক্রিম আপা’র বিরুদ্ধে স্মারকলিপি জমা দেন। জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে তিন দিনের মধ্যে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেয়া হয়েছে। স্মারকলিপির অনুলিপি মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এবং সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর দেয়া হয়েছে।
শারমীন শিলার বিরুদ্ধে স্মারকলিপি জমা দেয়া প্রসঙ্গে সাদাত জানান, মার্চ মাসে মাগুরায় আলোচিত শিশু ধর্ষণের ঘটনায় ফেসবুকের মাধ্যমে ‘একাই একশো’ শিশুদের সুরক্ষায় সামাজিক আন্দোলন শুরু হয়েছে। জেলা পর্যায়ে স্বেচ্ছাসেবকদের মাধ্যমে শিশু সুরক্ষায় কাজ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। শারমীন শিলা বা ক্রিম আপার বিরুদ্ধে এর আগেও এসব অভিযোগে লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছিল। তবে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এই দুই শিশুর শারীরিক ও মানসিক সুস্থতায় এবার জেলা প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। ফেসবুকে অনেকেই বিষয়টি নিয়ে সোচ্চার হয়েছেন, বিশেষ করে সন্তানের বাবা-মায়েরা চোখের সামনে দুটি বাচ্চাকে এভাবে নির্যাতনের শিকার হওয়ার বিষয়টি মেনে নিতে পারছেন না।
সাদাত আরও জানান, তারা জেলা প্রশাসক বরাবর যে স্মারকলিপি জমা দিয়েছেন, তা জেলা প্রশাসকের পক্ষে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. আব্দুর রাফিউল আলম গ্রহণ করেছেন। এ ছাড়া তারা জেলা প্রশাসক এবং সাভারের উপজেলা নির্বাহী অফিসারের (ইউএনও) সঙ্গে দেখা করেও বিষয়টি জানিয়েছেন। প্রশাসনিক বিভিন্ন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে তিন দিন সময় দিয়েছে জেলা প্রশাসন।
সাদাত রহমান জানান, শিশুদের অনলাইন সুরক্ষায় নীতিমালা তৈরি করতে হবে। নির্দিষ্ট বয়সের আগে সন্তানকে বা কোনো শিশুকে দিয়ে কেউ যাতে অনলাইনে ভিউ ব্যবসা করতে না পারে, তার ব্যবস্থা করতে হবে বা বিশেষ ক্ষেত্রে সরকারের অনুমতি নিতে হবে। তা না হলে শুধু ক্রিম আপা নন, অন্য বাবা–মায়েরাও সন্তানকে দিয়ে ভিউ ব্যবসা করাতে উৎসাহিত হতে পারেন। এতে শিশুদের শৈশবের আনন্দ হারিয়ে যাবে।
‘কনটেন্ট ক্রিয়েটর’ শারমীন শিলা জানান, সাভারের বাইপাইল এলাকায় তার বিউটি পারলার আছে, হিংসায় ষড়যন্ত্র করে এ ধরনের অভিযোগ দেয়া হচ্ছে। তিনি তার ১২ বছর বয়সী ছেলে এবং দেড় বছর বয়সী মেয়েকে অনেক ভালোবাসেন। তারা দুজন তার ‘কলিজার টুকরা’। তাদের নির্যাতন করার প্রশ্নই আসে না। তিনি এরপর আর এ ধরনের ভিডিও তৈরি করবেন না।
ঢাকা জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুর রাফিউল আলম জানান, তারা স্মারকলিপি পাওয়ার পর সাভারের ইউএনওকে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দিয়েছেন।
সাভারের ইউএনও মো. আবু বকর সরকার জানান, উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা শিশু বা সন্তানকে নির্যাতন করার অভিযোগের বিষয়ে ব্যাখ্যা চেয়ে ওই নারীর কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন। ওই নারী চিঠির সদুত্তর দিতে না পারলে প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।