চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলা ও দুই পৌরসভার কমিটি ঘোষণাকে কেন্দ্র করে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষে এক পথচারী নিহত হয়েছে। উপজেলা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ফুল দেয়া নিয়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষের আশঙ্কায় উপজেলা প্রশাসন বুধবার সকাল ৮টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত শহীদ মিনারের ৫০০ গজ এলাকার মধ্যে ১৪৪ ধারা জারি করে। এর ৪ ঘণ্টা পর দুপুর ১২টায় ১৪৪ ধারা ভেঙে শহীদ মিনারে মিছিলসহ এসে ফুল দিয়েছে চেয়ারম্যান নুরুল আমিন সমর্থকরা। কিছুক্ষণের মধ্যে ঘটনাস্থলে পুলিশ ও সেনাবাহিনী অবস্থান নিলে বিএনপির নেতাকর্মীরা ফুল দিয়ে স্থান ত্যাগ করে চলে যায়।
বুধবার (২৬ মার্চ) বারইয়ারহাট পৌরসভার সদ্য ঘোষিত কমিটির আহ্বায়ক মাঈন উদ্দিন লিটনের বাড়ির সামনে প্রথমে হামলার সূত্রপাত হয়। মাঈন উদ্দিন লিটন, মিরসরাই উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আজিজুর রহমান চৌধুরীর নেতৃত্বে একটি মিছিল বারইয়ারহাট বাজারে এলে নুরুল আমিন চেয়ারম্যান সমর্থকদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এ সময় মো. জাবেদ (৪৫) নামে এক পথচারী নিহত হন। আহত হন প্রায় ৩০ জন। নিহত ও আহতদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রাইভেট হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। নিহত জাবেদ চট্টগ্রামের বায়োজিদ থানার বাংলাবাজারের নীলগিরি আবাসিক এলাকার জাহাঙ্গীর ও জাহিদা বেগমের ছেলে। তিনি আরএফএল গ্রুপের এস আর (মার্কেটিং) হিসেবে কাজ করতেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আহত সুমন (৩৫) ফজলুল করিম (৪৩), জাহেদুল ইসলাম (৪২), শহিদুল ইসলাম (৫১), ওমর ফারুক (৩৫), দিদার (৩৭), আবু সুফিয়ান (৪০), ফাহিম (২২), এরশাদ (৪০), গোলাম মোর্শেদ (৪০), রাশেদ (৫০), দিদারুল আলম চৌধুরী (৪০), ইলয়াসকে (৫০) প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। আহত সুমন, গোলাম মোর্শেদ, ইলিয়াস হোসেন ও রাশেদকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। আহত আরো ৬ জনকে বারইয়ারহাট জেনারেল হাসপাতালে ও বারইয়ারহাট মেডিকেল সেন্টারে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।
জানা গেছে, ২৪ মার্চ চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম আকবর খোন্দকার মিরসরাই উপজেলা, মিরসরাই পৌরসভা ও বারইয়ারহাট পৌরসভা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করেন। কমিটি ঘোষণার পরপর চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল আমিন চেয়ারম্যানের সমর্থক পদবঞ্চিত নেতাকর্মীরা উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ মিছিল করে কমিটি বাতিলের দাবি জানান।
মঙ্গলবার (২৫ মার্চ) কমিটি বাতিলের দাবিতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ ও ঝাড়ু মিছিল শেষে সমাবেশ করে নুরুল আমিন চেয়ারম্যান সমর্থিত নেতাকর্মীরা। এদিকে ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ফুল দেয়াকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল আমিন ও আরেক যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল আমিন চেয়ারম্যানের গ্রুপের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে উপজেলা পরিষদ চত্বর ও তার আশপাশের ৫০০ গজের মধ্যে ১৪৪ ধারা জারি করে উপজেলা প্রশাসন। উল্লেখিত এলাকায় কোনো সভা, সমাবেশ, মিছিল, গণজমায়েত, বিস্ফোরকদ্রব্য, আগ্নেয়াস্ত্র, দেশীয় অস্ত্র বহনসহ একত্রে ৫ জন বা তারও বেশি লোকজনের চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।
বুধবার (২৬ মার্চ) দুপুর ১২টায় নুরুল আমিন চেয়ারম্যান গ্রুপের উপজেলা বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব গাজী নিজাম উদ্দিনের নেতৃত্বে সহস্রাধিক নেতাকর্মী ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে ফুল দিয়ে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানান। এসময় তারা চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম আকবর খন্দকারের বিরুদ্ধেও বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে মিছিলসহ বিএনপি নেতাকর্মীরা উপজেলা সদর ত্যাগ করেন। এসময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী শহীদ মিনারের পাশে অবস্থান নিলেও বাধা দেয়নি। বিএনপির নেতাকর্মীরা উপজেলা পরিষদ চত্বর ত্যাগ করলে সেনাবাহিনীর সদস্যরা সেখানে অবস্থান নেন।
উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব আজিজুর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘বুধবার সকাল ১০টায় বারইয়ারহাট পৌরসভা বিএনপির আহবায়ক মাঈন উদ্দিন লিটনের বাড়ির সামনে আমাদের নেতাকর্মীদের পথ অবরুদ্ধ করে হামলা, মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে অগ্নিসংযোগ করা হয়। বেলা ১২টায় নেতাকর্মীরা মিছিলসহ বারইয়ারহাট পৌর বাজারে প্রবেশ করলে নুরুল আমিন চেয়ারম্যান গ্রুপের লোকজন আমাদের ওপর সশস্ত্র হামলা চালায়। এসময় জাবেদ নামে একজন পথচারী তাদের হামলায় ঘটনাস্থলে নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরো ৯ জন।
বারইয়ারহাট পৌরসভা বিএনপির সাবেক আহবায়ক দিদারুল আলম মিয়াজী বলেন, বুধবার সকাল ১১টায় পৌরসভা বিএনপির আহবায়ক মাঈন উদ্দিন লিটনের বাড়ির সামনে বিএনপি নেতা মোজাম্মেল হোসেনসহ আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব আজিজুর রহমান চৌধুরী ও মাঈন উদ্দিন লিটনের নেতৃত্বে সশস্র হামলা করা হয়। স্বাধীনতা দিবসে বারইয়ারহাট ডিগ্রি কলেজের শহীদ মিনারে পুস্পস্তবক অর্পণ করার জন্য আমরা নেতাকর্মীদের নিয়ে অবস্থান করছিলাম। শান্তিরহাট রোডে এসময় মো. জাবেদ নামে এক পথচারী নিহত হয়। সংঘর্ষে যুবদল ও ছাত্রদলের সুমন, বাবুল, মিজান, নুর উদ্দিন, আরিফ সহ ৮-১০ জন আহত হয়েছেন।
বারইয়ারহাট পৌরসভা বিএনপির আহবায়ক মাঈন উদ্দিন লিটন বলেন, বুধবার সকালে দিদারুল আলম মিয়াজীর নেতৃত্বে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করে। এসময় ১০-১৫ জন আহত হয়। হামলার পর দুপুরে তারা আমাদের বাড়িতে গিয়েও ভাঙচুর চালায়। বুধবার বিকাল পর্যন্ত বারইয়ারহাট পৌরবাজারে তারা সশস্ত্র অবস্থানে ছিল।
১৪৪ ধারার কারণে ফাঁকা উপজেলা শহীদ মিনার: স্বাধীনতার পর এই প্রথম মহান স্বাধীনতা দিবসে মিরসরাই উপজেলা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শতাধিক সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠন ১৪৪ ধারার কারণে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানাতে আসেনি। শহীদ মিনারে প্রতিবছর ফুলে ফুলে ভরে উঠলেও এবার নেই মানুষের ভিড়, ফুলের সমাহার।