সামরিক শক্তিতে গত কয়েক বছরে বেশ উন্নতি করেছে বাংলাদেশ। গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার ইনডেক্সে ৩৫তম অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশের নাম। র্যাংকিংয়ে উন্নতি করলেও প্রযুক্তির এই যুগে দেশের বিমান বাহিনীতে গত দুই দশকে স্থান পায়নি তেমন কোনো অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান। অথচ বৈশ্বিক শক্তি মোকাবেলায় সামরিক শক্তিতে অনেক দুর্বল দেশগুলোও এখন তাদের বহরে অত্যাধুনিক যুদ্ধাস্ত্র যুক্ত করতে মন দিচ্ছে।
গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার ইনডেক্সের সর্বশেষ তালিকায় বাংলাদেশের কয়েকধাপ পেছনে ৪১তম অবস্থানে থাকা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ ফিলিপাইন অত্যাধুনিক যুদ্ধাস্ত্র কিনছে। সামরিক সক্ষমতা বাড়াতে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে ২০টি এফ-১৬ যুদ্ধবিমান পাচ্ছে দেশটি।
মঙ্গলবার (১ এপ্রিল) ফিলিপাইনের কাছে ৫.৫৮ বিলিয়ন ডলার মূল্যের যুদ্ধবিমান বিক্রির অনুমোদনের এ তথ্য জানিয়েছে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর। দক্ষিণ চীন সাগরে সামুদ্রিক বিরোধ নিয়ে ফিলিপাইন ও চীনের মধ্যে উত্তেজনার সময় মার্কিন ফাইটার জেট বিক্রির এমন সিদ্ধান্ত আসলো।
আল জাজিরা এক প্রতিবেদনে বলেছে, এই সিদ্ধান্তকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ শক্তি হিসেবে বর্ণনা করেছে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর।
স্টেট ডিপার্টমেন্ট জানিয়েছে, সমুদ্রে নজরদারি, ক্লোজ এয়ার সাপোর্ট মিশন পরিচালনা এবং শত্রুদের বিমান প্রতিরক্ষা দমনে এই সক্ষমতা ফিলিপাইন এয়ার ফোর্সের ক্ষমতাকে উন্নত করবে।
এর আগে ২০১৬ সালে থেকে ফিলিপাইন প্রকাশ্যে ওয়াশিংটন থেকে এফ-১৬ অর্জনে আগ্রহ প্রকাশ করে আসছে। সেই থেকে, ম্যানিলা এবং ওয়াশিংটন তাদের প্রতিরক্ষা সহযোগিতাকে উল্লেখযোগ্যভাবে গভীর করেছে।
বিশেষ করে ২০২২ সালে ক্ষমতা গ্রহণ করা বর্তমান রাষ্ট্রপতি ফার্দিনান্দ মার্কোস জুনিয়রের অধীনে দক্ষিণ চীন সাগরে বেইজিংয়ের দাবিগুলোকে পেছনে ঠেলে দিতে শুরু করেছিলেন।
এরই ধারাবাহিকতায় মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব পিট হেগসেথ গত সপ্তাহে ফিলিপাইন সফরের সময় বলেছিলেন, ওয়াশিংটন এবং ম্যানিলাকে “কমিউনিস্ট চীনাদের হুমকির” বিরুদ্ধে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়াতে হবে।
ফিলিপাইনের সামরিক প্রধান জেনারেল রোমিও ব্রাউনার বলেছেন, চীন যদি তাইওয়ান আক্রমণ করে তাহলে তার দেশ “অনিবার্যভাবে” জড়িত হবে। যদিও বেইজিংও জোরপূর্বক বা শান্তিপূর্ণ উপায়ে দ্বীপটিকে তাদের নিয়ন্ত্রণে ফিরিয়ে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এ ছাড়া বেইজিং সতর্ক করে বলেছে, এই ধরনের যুদ্ধাস্ত্র ক্রয় আঞ্চলিক “অস্ত্র প্রতিযোগিতার” দিকে নিয়ে যেতে পারে।
প্রসঙ্গত, মাটিতে থাকা যেকোনও চলন্ত বস্তুকেও নিশানা করতে সক্ষম এফ-১৬ যুদ্ধবিমান। আকাশপথে যুদ্ধের ক্ষেত্রে এফ ১৬-কে অনেক অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমানের চেয়ে এগিয়ে রাখেন বিশেষজ্ঞরা। প্রতি ঘণ্টায় বিমানটি ওড়ে ২৪১৪ কিলোমিটার গতিতে। এছাড়া এর অস্ত্র রাখার ক্ষমতাও অবিশ্বাস্য। ২১,২৮২ কেজি বিস্ফোরক নিয়ে ওড়ার ক্ষমতা রয়েছে এফ ১৬-এর।
যুদ্ধবিমানটির আনুষ্ঠানিক নাম ‘ফাইটিং ফ্যালকন’, যা ১৯৭৬ সালে উৎপাদনের অনুমোদনের পর থেকে ৪,৬০০টিরও বেশি এফ-১৬ নির্মিত হয়েছে। যদিও মার্কিন বিমানবাহিনী এখন আর এটি কেনে না। বর্তমানে ২৫টিরও বেশি দেশের বিমানবাহিনীতে এফ-১৬ রয়েছে। ২০১৫ সালের হিসাবে সামরিক সেবার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত বিশ্বের সর্বাধিক সংখ্যক ফিক্স-উইং বিমান এটি।