Close Menu
Vorer KhoborVorer Khobor
    Facebook X (Twitter) Instagram
    • About Us
    • Contact Us
    • Content Transparency
    • Editorial Policy
    • Fact Checking Policy
    Facebook X (Twitter) Instagram
    Vorer KhoborVorer Khobor
    Subscribe
    • Home
    • জাতীয়
    • আন্তর্জাতিক
    • রাজনীতি
    • আলোচিত সংবাদ
    • ক্যাম্পাস
    • খেলা
    • বিনোদন
    Vorer KhoborVorer Khobor
    Home»জাতীয়»ডক্টর ইউনূসের ভাষণ নিয়ে ভারতের অতি প্রতিক্রিয়ার অন্তরালে
    জাতীয়

    ডক্টর ইউনূসের ভাষণ নিয়ে ভারতের অতি প্রতিক্রিয়ার অন্তরালে

    অনলাইন ডেস্কBy অনলাইন ডেস্কApril 3, 2025 6:23 PMNo Comments12 Mins Read
    Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email
    Share
    Facebook Twitter LinkedIn Pinterest Email

    প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের চায়নায় দেয়া একটি ভাষণে ভারত ভীষণভাবে চটেছে। তারা এই বক্তব্যের বিরুদ্ধে লাগামহীন, অসংলগ্ন বক্তব্য রাখা শুরু করেছে। ভারতীয় মিডিয়ায় বলা হয়েছে, ডক্টর ইউনূস চিকেন নেক নিয়ে কথা বলেছেন, কেউ বলছেন তিনি ভারত ভাগ করার কথা বলেছেন, কারো মতে তিনি অনধিকার চর্চা করেছেন। এর প্রতিক্রিয়ায় কেউ কেউ বলছে্যন ৪৭ এ ভারতবর্ষ ভাগের সময় চট্টগ্রাম বন্দর ভারতের সাথে রেখে দিলে এই অবস্থা হতো না। কেউ কেউ বলছেন ১৯৭১ সালে ভারত বাংলাদেশকে কোন বিনিময় ছাড়াই স্বাধীন করে দিয়েছে, সেই বাংলাদেশ কেন আজ এমন কথা বলছে। প্রতিক্রিয়ায় কেউ কেউ এমনও বলছেন, বাংলাদেশের চিকেন নেক অর্থাৎ ফেনী থেকে বাংলাদেশকে আলাদা করে দেয়া উচিত, চট্টগ্রাম বন্দর দখল করে নেয়া উচিত, আবার কারো মতে পার্বত্য চট্টগ্রাম দখলের বক্তব্য এসেছে।

    আমি ভারতীয়দের এ ধরনের অতিরঞ্জিত প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশি কেয়ারটেকার প্রধানের এ সংক্রান্ত বক্তব্যটি কয়েকবার পড়লাম। তিনি মূলত যেটি বলেছেন তা হল, ভারতের যে সেভেন সিস্টার্স রাজ্যসমূহ রয়েছে, তাদের বিরাট অর্থনৈতিক সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু সমুদ্র সংলগ্নতা না থাকায় এই সম্ভাবনা কাজে লাগানো যাচ্ছে না। এই রাজ্যগুলোর নিকটবর্তী সমুদ্র বন্দর যেহেতু বাংলাদেশে রয়েছে, তাই তিনি এ অঞ্চলের সমুদ্রের অভিভাবক হিসেবে বাংলাদেশকে আখ্যা দিয়ে চাইনিজদের অনুরোধ করেছেন, এই অঞ্চলে বিনিয়োগ করতে, উৎপাদন করতে, বাজারজাত করতে এবং শুধু স্থানীয় বাজারের জন্য নয় আন্তর্জাতিক বাজারের জন্য এই অঞ্চলে বিনিয়োগ ও উৎপাদন করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের সমুদ্র বন্দর ব্যবহার করে চায়না এই অঞ্চলে উৎপাদিত পণ্য স্থানীয় বাজার নয় বাংলাদেশ এবং সারা বিশ্বে বাজারজাত করতে পারবে। শুধু এটুকুই বলেছেন তিনি। তিনি আরো বলেছেন, বাংলাদেশ এই অঞ্চলের মহাসাগরের অভিভাবক, বাংলাদেশ তাদের জন্য এই সুবিধা অবারিত করতে পারে।

    তার এই বক্তব্য সহজভাবে বিশ্লেষণ করে এখানে দূষণীয় কোন কিছু পাইনি। বরং ভারতের খুশি হওয়ার অনেক বড় একটা ব্যাপার হতে পারতো এভাবে যে, তাদের দেশে বিনিয়োগ ও পণ্য উৎপাদনের জন্য ক্যাম্পেনিং করছে আরেকটি দেশের সরকার প্রধান। এটাতো অনেক ইতিবাচক ভাবে নেয়া যেতে পারত। কিন্তু ভারত এ আঙ্গিকে চিন্তা করেনি। তারা হয়তো ভিন্ন কোন গন্ধ পেয়েছে এখানে। তবে কি ডঃ মুহাম্মদ ইউনুস কোন নতুন পরিকল্পনা বা পথ বাতলে দিয়েছেন চায়নার জন্য? তা কিন্তু মোটেই নয়। অন্তত তার এ বক্তব্যে এমন কিছু ছিটেফোটাও নেই।

    আমরা যদি বিগত ৫০ বছরে ভারত-বাংলাদেশ কূটনৈতিক সম্পর্ক এবং লেনদেন ও আলোচনার দিকে দৃষ্টিপাত করি তাহলে দেখতে পাবো, ভারত সবসময়ই বাংলাদেশের কাছে তার এই সেভেন সিস্টার্স রাজ্যগুলোর সমুদ্র অগম্যতা ও এ অসুবিধার নানা দিক তুলে ধরে বাংলাদেশের সমুদ্র বন্দরগুলো ব্যবহারের জন্য অনুরোধ করেছে। স্বাধীনতার পর থেকেই বাংলাদেশ ভারতের এ অঞ্চলের মানুষের অসুবিধার কথা চিন্তা করে তার নদীপথ সমূহ উন্মুক্ত করে রেখেছে। বাংলাদেশের অনেকগুলো নদীবন্দর তারা ব্যবহার করে থাকে এই অঞ্চলে পণ্য পরিবহনের জন্য। এছাড়াও ভারতের মূল ভূখণ্ডের সাথে সংযোগ স্থাপন, জনগণ ও মালামাল পরিবহনের জন্য বাংলাদেশের ভিতর দিয়ে অসংখ্য রুট প্রস্তাব করেছে। বিষয়টি বাংলাদেশের নিরাপত্তার সাথে সম্পর্কিত হওয়ায় অতীতে কোন বাংলাদেশ সরকার এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারেনি।

    ভারত আন্তর্জাতিক নানা সংস্থা যেমন, এসক্যাপ প্রভৃতি ব্যবহার করে বাংলাদেশের মধ্যে প্রচার করেছে যে, বাংলাদেশ যদি ভারতকে ট্রানজিট ও করিডর সুবিধা দেয় তাহলে প্রাপ্ত মাসুল দিয়ে বাংলাদেশ সিঙ্গাপুর হয়ে যেতে পারে। এদের সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশে ভারতপন্থী রাজনীতিবিদ, অর্থনীতিবিদ, সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবীগণ এই প্রচারণায় ধোঁয়া দিয়ে গেছে বছরের পর বছর। অবশেষে শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতায় আসার পর ভারতীয় এই দাবি বাস্তবতার মুখ দেখতে শুরু করে। একের পর এক বাংলাদেশের নদীবন্দর, সমুদ্র বন্দর, স্থলবন্দরগুলো এবং অভ্যন্তরীণ রোড নেটওয়ার্কগুলো ভারতীয় জনগণ ও পণ্য পরিবহনের জন্য সুবিধা দিয়ে চুক্তি করা হয়। এসব চুক্তির অধিকাংশই অত্যন্ত গোপনে করা হয় যা দেশের মাঝে বা পার্লামেন্টে কোন আলোচনা করা হয়নি। দেশের মধ্যে আলোচনা রয়েছে যে, এ সমস্ত চুক্তির অনেকগুলোই এখন পর্যন্ত গোপন রয়ে গেছে। এবং এইসব চুক্তির অনেকগুলোই বাংলাদেশের স্বার্থ, অর্থনীতি ও সার্বভৌমত্বের জন্য চরম হুমকিস্বরূপ। দেশের মধ্যে আলোচনা রয়েছে যে, যেসব রুটে এই পণ্য পরিবহন করা হবে সেই সব রুটের নিরাপত্তার দায়িত্ব ভারতকে দেয়া হবে বলে এরকম একটি গোপন চুক্তি শেখ হাসিনা করে রেখেছেন, যা দুই দেশের কেউই এখনো ওপেন করেনি।

    আরও পড়ুনঃ  ঈদের জামাতে আসিফ কেন আলাদা কাতারে দাঁড়িয়েছিলেন, জানা গেল কারণ

    এখানে উল্লেখ্য, বাংলাদেশের বিমানবন্দর, চট্টগ্রাম বন্দর, মংলা সমুদ্র বন্দর এবং বিভিন্ন স্থলবন্দর ভারতকে ব্যবহারের জন্য দেয়া হলেও বাংলাদেশ সিঙ্গাপুর হওয়া তো দূরের কথা, উল্টো এগুলো বাংলাদেশের উপর বোঝার মত চেপে ধরেছে। কেননা এই সমস্ত বন্দর ও রোড নেটওয়ার্ক ভারতকে অনেকটা বিনা শুল্কে বা নামমাত্র শুল্কে ব্যবহারের অনুমতি দেয়া হয়েছে। অনেক জায়গায় বাংলাদেশী পণ্য পরিবহনের জন্য নির্ধারিত শুল্কের থেকেও ভারতীয় পণ্য পরিবহনের জন্য অপেক্ষাকৃত কম শুল্ক নির্ধারণ করে অধিক প্রায়োরিটি দেয়া হয়েছিল। খোদ শেখ হাসিনা গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, তিনি ভারতকে যা দিয়েছেন তার কোন বিনিময় চান না। তার অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ডঃ মশিউর রহমান গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, ভারতের কাছে শুল্ক চাওয়া অসভ্যতা। ফলে ভারত অনেকটা বিনা শুল্কে বাংলাদেশের বন্দর ও রোড নেটওয়ার্ক ব্যবহারের অনুমতি পেলেও এই সমস্ত বন্দর ও রোড ম্যানেজমেন্ট এবং সংস্কারের দায়িত্ব বাংলাদেশের উপর চেপে রয়েছে। শুধু তাই নয় ভারতের প্রয়োজনে নতুন নতুন সড়ক, ব্রিজ ও বন্দর নির্মাণ এবং বন্দরের স্থাপনা নির্মাণ বাংলাদেশের নিজস্ব অর্থায়নে করা হলো। এগুলো ভারতের চাহিদাতেই করা হয়েছিল। পদ্মা ব্রিজ, কর্ণফুলী টানেল, ফেনী ব্রিজ প্রভৃতি মূলত ভারতের স্বার্থে করা।

    ভারত চেয়েছিল এই সমস্ত রোড নেটওয়ার্ক ও বন্দর ব্যবহার করে একদিকে ভারতের মূল ভূখণ্ডের সাথে দূরবর্তী সেভেন সিস্টার্সের বহুমুখী যোগাযোগ স্থাপন এবং এই অঞ্চলে উৎপাদিত পণ্য ভারতের মূল ভূখণ্ডে এবং বিশ্ববাজারে রপ্তানির দুয়ার খুলতে। এ কারণেই তারা আমাদের চট্টগ্রাম বন্দরে এক্সসেস নিয়েছে এবং মংলা বন্দরেও এক্সেস নেয়ার জন্য সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছিল। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে রামগড় হয়ে আগরতলায় পণ্য পরিবহনের রুট স্থাপন করেছে। কোন বিনিময়হীনভাবেই ভারত এই সুবিধাগুলো বাংলাদেশ থেকে নিয়েছিল। বলা হয়ে থাকে, অন্তত ৩০টি পয়েন্ট দিয়ে ভারত বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে রোড, রেল, নৌ ও বন্দর সুবিধা নেয়ার চেষ্টা করেছিল। হাসিনা আর ২-৩ বছর টিকে থাকলে এগুলো বাস্তবতার মুখ দেখতো। শেখ হাসিনা বিনিময়হীনতার কথা বললেও বাস্তবে তা মোটেই বিনিময় হীন ছিল না। বাংলাদেশের ভেতরে বাংলাদেশের স্বার্থ ও সার্বভৌমত্ব বিরোধী ভারতকে নানা দেয়া নানা সুবিধার বিনিময়ে ভারত টানা সাড়ে ১৫ বছর অনির্বাচিত হবে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রেখেছিল এবং দ্বিপাক্ষিক ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তার সমর্থনের জন্য কাজ করেছে।

    আমরা সবাই জানি ভারতের সেভেন সিস্টার্সে বিপুল পরিমাণ প্রাকৃতিক সম্পদ রয়েছে। কিন্তু যোগাযোগ সমস্যা এবং সমুদ্র সংযোগ না থাকার কারণে এই সম্পদ ব্যবহার করে এই অঞ্চলে শিল্প ও বাণিজ্যে বিনিয়োগ তেমন ঘটেনি। একই কারণে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ পরিকল্পকগণ ব্যাপক সম্ভাবনা সত্ত্বেও এ নিয়ে দ্রুত এগিয়ে আসেনি। ইতোপূর্বে আমরা ভারতের এই অঞ্চলের কাঁচামাল পাথর শিল্পের উপর নির্ভর করে সিলেটে হোলসিম নামক বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় সিমেন্ট উৎপাদন কোম্পানির বিনিয়োগ হতে দেখেছি। এ ধরনের উদ্যোগের ফলেই ভারত ও বাংলাদেশ উভয়েই লাভবান হতে পারে। এ পরিকল্পনাটি আরও বিস্তারিতভাবে চিন্তা করেছিল জাপান। তার অংশ হিসেবে বে অব বেঙ্গল ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রোথ ইনিশিয়েটিভ- বিগ বি( BIG- B) নামে জাপান সরকার ও জাইকা একটি বিশাল আঞ্চলিক প্রকল্প হাতে নেয়।

    ২০১৪ সালের মে মাসে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশটি সফরের সময়ে বাংলাদেশে উন্নয়ন সহায়তা হিসেবে চার-পাঁচ বছরের মধ্যে ৬০ হাজার কোটি ইয়েন (তৎকালীন বিনিময় হার অনুযায়ী প্রায় ৬০০ কোটি ডলার) বিনিয়োগের ঘোষণা দেন তৎকালীন জাপানি প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে। ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ সফর করেন শিনজো আবে। ওই সফর চলাকালে তিনি অর্থনৈতিক অবকাঠামো, আঞ্চলিক যোগাযোগ ও বিনিয়োগ পরিবেশের উন্নয়নে জাপানের পক্ষ থেকে আর্থিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি দেন। বিগ-বি প্রকল্পটি তখন থেকেই বাংলাদেশে আলোচনায় আসে।

    বিশ্বের জন্য এই প্রকল্পের দুয়ার খুলতে মাতারবাড়িতে ইতোমধ্যেই একটি গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ করেছে তারা। এই বন্দরকে ঘিরে আঞ্চলিক সড়ক নেটওয়ার্ক, বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র সহ বিশাল বিশাল পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। জাপান বাংলাদেশের পাশাপাশি ভারতের সেভেন সিস্টার্স ও মিয়ানমারের বাংলাদেশ-ভারত সংলগ্ন অঞ্চলে প্রাপ্য কাঁচামালের উপরে ভিত্তি করে শিল্প খাতে বিপুল বিনিয়োগ করার লক্ষ্য নিয়ে এই বিগ বি প্রকল্প প্রণয়ন করে। তাদের আগ্রহ ছিল, বাংলাদেশ এবং ভারতের সেভেন সিস্টার্স ও মিয়ানমারের সম্মিলিত অঞ্চলগুলোতে প্রাপ্য কাঁচামালের উপরে ভিত্তি করে নির্মিত শিল্পপণ্য বাংলাদেশের মাতারবাড়ি সমুদ্র বন্দর ব্যবহার করে বিশ্ব বাজারে বাজারজাত করা। এই প্রকল্প নিয়ে ভারতকে কিন্তু কোনদিন কোন আপত্তি তুলতে দেখা যায়নি। বরং এটিকে তারা অত্যন্ত ইতিবাচক ভাবে দেখেছিল।

    আরও পড়ুনঃ  আব্বু, আমি তো বাঁচব না, লাশটা নিয়ে যাইয়ো

    ২০২৩ সালের ১৯-২১ মার্চে ভারত সফর করেন জাপানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা। এ সফরে আলোচনায় উঠে আসে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল ও উত্তর-পূর্ব ভারতের উন্নয়ন পরিকল্পনা। বলা হয়, এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বাংলাদেশে নির্মাণ হবে নতুন শিল্প কেন্দ্র। এরপর ২৯ মার্চ মাতারবাড়ী বন্দর উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের দ্বিতীয় পর্যায়ের ঋণ চুক্তিসহ মোট তিনটি প্রকল্পের ঋণ চুক্তি স্বাক্ষর ও নোট বিনিময় করেন বাংলাদেশ ও জাপান সরকারের প্রতিনিধিরা। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে স্বাক্ষর হওয়া অন্য প্রকল্পগুলো ছিল চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক উন্নয়ন এবং জয়দেবপুর-ঈশ্বরদী অংশে ডুয়াল গেজ ডাবল রেললাইন নির্মাণ। ঋণের আকার ছিল ১ দশমিক ২৭ বিলিয়ন ডলার।

    ২০২৩ সালের ১১-১২ এপ্রিল ভারতের ত্রিপুরার আগরতলায় বাংলাদেশ, জাপান ও ভারতের ত্রিপক্ষীয় সম্মেলন আরেকটি অনুষ্ঠিত হয়। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় শিলংভিত্তিক থিংকট্যাংক এশিয়ান কনফ্লুয়েন্স সম্মেলনটি আয়োজন করে। এতে অংশ নিয়েছিলেন বাংলাদেশ ও ভারতের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী, ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী, ভারতে নিযুক্ত জাপানি রাষ্ট্রদূত এবং অন্য গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা।

    সম্মেলনে নতুন শিল্প কেন্দ্র স্থাপন প্রসঙ্গে ভারতে তৎকালীন জাপানের রাষ্ট্রদূত হিরোশি সুজুকি বলেন, ‘এটি ভারত ও বাংলাদেশ উভয়ের বিজয়ী হওয়ার মতো একটি পরিকল্পনা হতে পারে।”গভীর সমুদ্রবন্দরটি (মাতারবাড়ী বন্দর) সম্ভবত ২০২৭ সালের মধ্যে চালু হবে এবং এটি ঢাকা থেকে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল পর্যন্ত সংযুক্ত একটি শিল্প কেন্দ্র গড়ে তোলার অন্যতম প্রধান চাবিকাঠি হবে।’

    এটা প্রকৃতপক্ষে জাপানের অবাধ ও মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলেরই অংশ। বিশ্লেষকদের মতে, জানিয়েছেন, ফ্রি অ্যান্ড ওপেন ইন্দো-প্যাসিফিকের মূল উদ্দেশ্য ছিল মাতারবাড়ীর গভীর সমুদ্রবন্দরের সঙ্গে ভারতের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের সংযোগ ঘটানো। ত্রিপুরার সাবরুম ও খাগড়াছড়ির রামগড়—এ দুটো স্থানের সংযোগ ঘটলে মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরের দূরত্ব ১০০ থেকে ১২০ কিলোমিটারের মধ্যে চলে আসে, যেটি মুম্বাই বন্দর বা দিল্লি থেকে কলকাতা এলে অর্থাৎ পুরোটা ঘুরে এলে ৩ হাজার কিলোমিটার—এটাই ছিল পরিকল্পনা—উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ভ্যালু চেইনকে আড়াইহাজারের জাপানি অর্থনৈতিক অঞ্চলের মাধ্যমে সম্প্রসারণ করা। অর্থনৈতিক অঞ্চলে পণ্য উৎপাদন করে আসিয়ান ও আসিয়ানের বাইরে অর্থাৎ ইন্দো-প্যাসিফিকের পুরো অঞ্চলে একটা ইকোনমিক করিডোর উন্নয়ন করার পরিকল্পনা রয়েছে জাপানের।

    শুধু বাংলাদেশ নয় এই প্রকল্পের আওতায় জাপান ভারতের সেভেন সিস্টার্স রাজ্যগুলোতে বিপুল বিনিয়োগ করেছেন। মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দরকে ভ্যালু অ্যাড করতে ভারতের সেভেন সিস্টার্সের সাথে কানেক্টিভিটির অংশ হিসেবে অসংখ্য ব্রিজ ও সড়ক নির্মাণে অর্থায়ন করছে জাইকা। এর মধ্যে রয়েছে ভারতে আসামের নয়া ধুবড়ি থেকে মেঘালয়ের ফুলবাড়ি পর্যন্ত নির্মাণ হচ্ছে ১৯ কিলোমিটার দীর্ঘ সেতুর মতো বিশাল প্রকল্প। এটিই হতে যাচ্ছে ভারতের দীর্ঘতম সেতু।

    যদিও জুলাই বিপ্লবের পর ঘোষণা না দেওয়া হলেও বাংলাদেশের স্পর্শকাতর পার্বত্য চট্টগ্রাম দিয়ে ভারতকে এ ধরনের করিডোর দেয়ার ব্যাপারে নেতিবাচক মনোভাব রয়েছে সরকারের মধ্যে।

    ডঃ মুহাম্মদ ইউনুস চায়নাতে একই কথা বলেছেন। পার্থক্য শুধু জাপানের পরিবর্তে চায়না। এতে ভারত তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠেছে।

    ভারত আজকে বলছে, এটি নাকি ডক্টর মুহাম্মদ ইউনুসের অনধিকার চর্চা। অথচ স্বাধীনতার পর থেকে ভারত বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ বিষয়ে যেভাবে নগ্ন ও ন্যাক্কারজনকভাবে হস্তক্ষেপ করেছে সেগুলোকে তার কাছে অনধিকার চর্চা মনে হয়নি। অতীতের কথা বাদ দিলেও বিগত সাড়ে ১৫ বছরে নির্বাচন বিহীনভাবে অবৈধ শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখতে ভারত বাংলাদেশের অন্তর আত্মার বিভিন্ন অলিতে গলিতে যেভাবে প্রবেশ করেছে এবং প্রভাব বিস্তার করেছে, সেগুলোকে তার কাছে অনধিকার চর্চা মনে হয়নি। অন্য একটি দেশের নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করতে তাদের পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিং কে যখন বাংলাদেশে পাঠানো হয় তখন তাদের অনধিকার চর্চা মনে হয়নি। বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে দিল্লিতে বিশেষ বৈঠক করা হয়, ওয়াশিংটনে যখন বিশেষ দূত প্রেরণ করা হয় তখন তাদের অনধিকার চর্চা মনে হয়নি। এমনকি ৩৬ জুলাই বিপ্লবে শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের সাথে তাদের প্রায় সকল বৈঠকে বাংলাদেশ বিষয়ে আলোচনা করা তাদের কাছে অনধিকার চর্চা মনে হয়নি। প্রতিদিন বাংলাদেশ নিয়ে ভারতীয় মিডিয়ায় নির্লজ্জ মিথ্যাচার ও অপপ্রচার এবং ভারতীয় কূটনীতিকদের অসত্য অভিযোগগুলোকে তাদের কাছে অনধিকার চর্চা মনে হয়না। পার্বত্য চট্টগ্রামের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের আশ্রয়, প্রশ্রয়, প্রশিক্ষণ, অস্ত্র ও অর্থ দেয়া তাদের কাছে অনধিকার চর্চা মনে হয় না। বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের নিয়ে নিত্যনতুন প্রোপাগান্ডা তাদের কাছে অনধিকার চর্চা বলে মনে হয় না। আপত্তি বা প্রভাব খাটিয়ে তিস্তা ও পদ্মা ব্যারাজ প্রকল্প কাজে বাধা দান তাদের আপত্তি মনে হয়নি। এই ভারত যখন বাংলাদেশের অনধিকার চর্চা নিয়ে কথা বলে তখন রাম গোরুড়ের ছানাও না হেসে পারে না।

    আরও পড়ুনঃ  এসপিসহ ৬ ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাকে বদলি, জানা গেল নাম

    এখানে প্রশ্ন হল, তাহলে এরকম একটি সাধারন বিষয়ে ভারতের এই অতি প্রতিক্রিয়ার কারণ কী হতে পারে? প্রথমত ডক্টর ইউনুস চায়না সফরে এমন কিছু কাজ করেছেন যা সরাসরি বাংলাদেশে ভারতের দাদাগিরি ও স্বার্থের বিপক্ষে গিয়েছে। প্রথমত মংলা বন্দর থেকে ভারতকে আউট করে তিনি চায়নাকে সুযোগ দিয়েছেন। দ্বিতীয়তঃ তিস্তা প্রজেক্টে ভারতের আপত্তি সত্ত্বেও চায়নাকে অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়া। তৃতীয়তঃ বাংলাদেশী রোগীদের উপর নির্ভরশীল বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের ভারতের মেডিকেল ট্যুরিজমের বিকল্প হিসেবে চায়নাকে বেছে নেওয়া। চতুর্থত উজানের দেশ হিসেবে চায়নার সাথে নদীর পানির তথ্য বিনিময়। এই চুক্তি বা সমঝোতাগুলো ভারতের পছন্দ হওয়ার কথা নয়। কিন্তু যেহেতু এগুলো বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় তাই সরাসরি ভারত এখানে নাক গলাতে পারছে না। সে কারণে তাদের সংশ্লিষ্ট নির্দোষ বিষয় নিয়ে মাত্রাতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে।

    কোন কোন বিশেষজ্ঞদের মতে, চিকেন নেক দ্বারা মূল ভূখণ্ডের সাথে সংযুক্ত সেভেন সিস্টার্স মূলত ভারতের একিলিস হিল, যা সব সময় তারা একটু আড়ালে ও আলোচনার বাইরে রেখে চলেছে। ড. মুহাম্মদ ইউনূস সেই স্বল্প আলোচিত রেস্ট্রিক্টেড ভারতীয় একিলিস হিল উন্নয়নের নামে কৌশলে চায়নাকে দেখিয়ে দিয়েছে এবং সেখানে তাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছে। এটা ভারতের উদ্বেগের অন্যতম কারণ হতে পারে। আবার কারো মতে ড. মুহাম্মদ ইউনুস বাংলাদেশকে ভারত মহাসাগরের অভিভাবক বলে দাবি করাটাই ভারতের উত্তেজিত হওয়ার প্রধান কারণ। কেননা ভারত দীর্ঘদিন ধরেই ভারত মহাসাগরের প্রধান জিম্মাদার বলে বিশ্বব্যাপী দাবি করে আসছে। এর সুবিধাগুলো এবং সেই সুবিধা রক্ষার জন্য নিত্যনতুন প্রকল্প প্রণয়ন করেছে তারা। তেমনি একটি প্রকল্প হচ্ছে security and growth for all the regional (SAGAR). এছাড়াও বঙ্গোপসাগরে চায়না প্রতিরোধ নীতির অংশ হিসেবে প্রণীত কোয়াড এ পরিকল্পনার অংশ। এতদ্বসত্বেও ভারত মহাসাগরের চায়নিজ সাবমেরিনের যাতায়াত নিয়ন্ত্রণ করতে আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে মার্কিন নেভির প্যাসিফিক ফ্লিটের জন্য বিশেষ সুবিধা দিয়েছে ভারত। রাখাইনের সিটুয়েতে কালাদান নদীর তীরে কালাদান মাল্টি মডেল প্রজেক্ট নির্মাণে হাত দিয়েছে। এসব কিছুর মূল লক্ষ্য ভারত মহাসাগরে নিজস্ব নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি এই মহাসাগরের একক নিয়ন্ত্রক হিসেবে প্রতিষ্ঠার খায়েস। কিন্তু মুহাম্মদ ইউনূসের মহাসাগরীয় অভিভাবকত্ব দাবি ভারতের সেই দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্নে বিশাল আঘাত হেনেছে। এটাও ভারতের পক্ষ থেকে এমন তীব্র প্রতিক্রিয়া আশার অন্যতম কারণ বলে অনেকের ধারণা।

    এদিকে ভারতের সংকুচিত চিকেন নেক সীমাবদ্ধতা কাটানোর লক্ষ্যে সে দেশের সাবেক সেনা কর্মকর্তাগণ দীর্ঘদিন ধরেই বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, দিনাজপুর, লালমনিরহাট ও রংপুর জেলা নিয়ে গঠিত অঞ্চলকে দখল করে ভারতের সাথে মিলিয়ে দেয়ার প্রস্তাব করে আসছে। এছাড়াও বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ডের সাথে চট্টগ্রামের সংযোগ ফেনীর সংকীর্ণ করিডোর যাকে বাংলাদেশের চিকেন নেক বলা হচ্ছে সেখানে বিচ্ছিন্ন করে চট্টগ্রাম দখল করার হুমকি দেয়া হচ্ছে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। ভারতের অবসরপ্রাপ্ত সামরিক ও গোয়েন্দা কর্মকর্তাগণ এ ধরনের হুমকি দিচ্ছেন।

    দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে এই ফেনী নদীর উপরে শেখ হাসিনার সরকার বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত স্পর্শকাতর একটি ব্রিজ তৈরি করে দিয়েছেন। এই ব্রিজটি ভারতের জন্য এতই গুরুত্বপূর্ণ ছিল যে, এটি উদ্বোধনে খোদ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বাংলাদেশের এসেছিলেন। এছাড়াও এই সংকীর্ণ করিডরের পাশেই বাংলাদেশ ভারতের জন্য এক্সক্লুসিভ ইকোনমিক জোন করার জন্য জায়গা দিয়েছে। ইতোমধ্যেই এসব বিষয় নিয়ে জনগণের মধ্যে ব্যাপক প্রশ্ন উঠলেও সরকারকে এ ব্যাপারে খুব বেশি উদ্যোগী হতে দেখা যাচ্ছে না। ৩৬ জুলাই বিপ্লবের পর থেকে ভারতীয় অবসরপ্রাপ্ত সামরিক ও গোয়েন্দা কর্মকর্তাগণ বাংলাদেশের জন্য স্পর্শকাতর এসব বিষয়ে তাদের প্রস্তাব বেশ জোরেসোরেই আলোচনা করছেন। চায়নাতে ডক্টর ইউনুসের ভাষণের পর আবারো ভারতীয়রা এই প্রস্তাব সামনে নিয়ে এসেছে। এতে বোঝা যায়, দীর্ঘদিন ধরেই ভারতীয়দের শৈণ দৃষ্টি রয়েছে এই অঞ্চলের উপর। বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতার রক্ষার খাতিরে সরকারের উচিত অতি দ্রুত এই অঞ্চলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পাকিস্তান ও চায়নার সহযোগিতায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা। প্রখ্যাত রাষ্ট্রবিজ্ঞানী প্রফেসর এম শহিদুজ্জামানের মতে, ভারত এসব অঞ্চল বিচ্ছিন্ন করার পরে উদ্ধারের জন্য যুদ্ধ করার চেয়ে, বিচ্ছিন্ন করার আগেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা উত্তম।

    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email
    অনলাইন ডেস্ক

      Related Posts

      ভারত-তাজউদ্দীনের গোপন সেই ৭ দফা চুক্তিতে আসলে কী ছিল?

      April 12, 2025 9:33 AM

      শঙ্কা’র পরেই ফের ভূমিকম্প, ৪ জেলা উচ্চ ঝুঁকিতে

      April 12, 2025 9:17 AM

      সকল আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর ঢাকায় আগমন ঠেকানোর নির্দেশ পুলিশের

      April 12, 2025 8:12 AM
      Add A Comment
      Leave A Reply Cancel Reply

      Latest News

      CA to visit UK from June 10–13 to deepen Dhaka-London ties – Bd24live

      June 21, 2025 2:11 AM

      Crypto Crossroads: Navigating the Optimal Exchange from Tether TRC20 (USDT) to Litecoin (LTC) – Bd24live

      June 20, 2025 10:43 PM

      Israeli Airstrikes Kill Iran’s Revolutionary Guard Chief – Bd24live

      June 20, 2025 7:09 PM

      Israel Unilaterally Attacked Iran: U.S. Secretary of State – Bd24live

      June 20, 2025 4:41 PM
      Facebook X (Twitter) LinkedIn WhatsApp Telegram
      © 2025 Vorer Khobor

      Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.